ঐতিহাসিক পদক্ষেপের পথে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। সোমবারই দেশ জুড়ে সিএএ অর্থাৎ নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইনের বিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে। জানা গিয়েছে, সিএএ জারির জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে।
আজ রাতের মধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সরকারি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ক যাবতীয় নিয়ম কানুন জারি করা হবে বলে সূত্রের খবর। পরবর্তী সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে বিবৃতিও জারি করা হবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিজেপি নেতারা বারবার বলেছেন, লোকসভা নির্বাচনের আগেই সিএএ কার্যকর করা হবে। সিএএ বিজ্ঞপ্তি জারির পরই সিএএ কার্যকর করা হতে পারে।
নাগরকিত্ব সংশোধনী আইন (CAA) নিয়ে অবশ্য আগেও প্রচুর হইচই হয়েছে। সেই সুযোগে সঠিক তথ্য সম্পর্কে বিভ্রান্তিও ছড়িয়েছে। কিন্তু আপনি জানেন কী, সিএএ বা নাগরকিত্ব সংশোধনী আইন আসলে কী? আপনার-আমার কী হতে পারে এতে?
ভারতীয় নাগরিকদের উপর কতটা প্রভাব ফেলবে নাগরকিত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য বলছে, ভারতীয় নাগরিকদের সঙ্গে সিএএ বা নাগরকিত্ব সংশোধনী আইনের কোনও সম্পর্কই নেই।
এদেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের উল্লেখ রয়েছে ভারতীয় সংবিধানে। সিএএ বা এই সম্পর্কিত কোনও আইন সেই অধিকার কেড়ে পারে না। এমনকী, মুসলিম-সহ ভারতীয় নাগরিকদের উপরও সিএএ-র কোনও প্রভাব পড়বে না।
এই সিএএ কাদের জন্য কার্যকর হবে? ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে বিতাড়িত হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান শরণার্থীদের জন্য এই নাগরকিত্ব সংশোধনী আইন। ওই তিন দেশ বা অন্য কোনও দেশ থেকে আসা মুসলিম-সহ অন্য কোনও বিদেশি শরণার্থীদের জন্য CAA লাগু হবে না।
ওই তিন দেশ থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টানদের কীভাবে সুবিধা হবে সিএএ থেকে? পাসপোর্ট বা ভিসার মতো নথি না থাকলেও ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যাবে। সিএএ-র মাধ্য়মে এই শরণার্থীরা এমন সুযোগ পাবেন। দ্বিতীয়ত, ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য তাঁদের আবেদনের রাস্তা আরও মসৃণ হবে। এদেশে বসবাসের ন্যূনতম সময় ১+১১ বছরের পরিবর্তে ১+৫ বছর হবে।
এই দেশগুলি থেকে এদেশে এসে অবৈধ ভাবে বসবাস করা মুসলিমদের কি বিতাড়িত করা হবে? একেবারেই কিন্তু না। কোনও নাগরিকের বিতাড়নের সঙ্গে সিএএ-র কোনও সম্পর্ক নেই। ১৯৪৬-এর বিদেশি আইন ও ১৯২০-র পাসপোর্ট আইন অনুযায়ী এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে। বিদেশি নাগরিকদের ভারতে প্রবেশ এবং প্রস্থান সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত এই দুই আইনের ভিত্তিতেই নেওয়া হয়। কোনও ব্যক্তির ধর্ম বা দেশের ভিত্তিতে নয়। ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী যে কোনও বিদেশির জন্যই এই দুই আইন প্রযোজ্য।
ওই ৩ দেশে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারের শিকার হওয়া হিন্দুরা কি সিএএ-র জন্য আবেদন করতে পারবেন? না। তাদের অন্য ধর্মের বিদেশি নাগরিকদের মতোই আগের পদ্ধতিতে আবেদন করতে হবে। সিএএ থাকলেও ১৯৫৫-র নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, তারা কোনও অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন না।
সিএএ-র কারণে ধীরে ধীরে ভারতীয় নাগরিকত্ব হারাবেন মুসলিমরা? সিএএ কোনও ভারতীয় নাগরিকের উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না। সব ভারতীয় নাগরিকরাই তাদের সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকার পাবেন। কোনও ভারতীয় নাগরিককে তার নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করবে না সিএএ। বরং, তিন পড়শি দেশের নির্দিষ্ট পরিস্থিতির শিকার বিশেষ বিদেশি নাগরিকদের জন্য ভারতীয় নাগরিকত্বের সুযোগ করে দেবে এই আইন।
সিএএ-র পর এনআরসি হবে এবং মুসলিম বাদে সব শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এবং মুসলিমদের কি ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হবে? এনআরসি-র সঙ্গে সিএএ-র কোনও সম্পর্ক নেই। ২০০৪ সালের ডিসেম্বর থেকেই ১৯৫৫-এর নাগরিকত্ব আইনের সঙ্গে আইনত সংযুক্ত এনআরসি। এবং ২০০৩ সালের কিছু নির্দিষ্ট নিয়মের ভিত্তিতেই এই আইন কার্যকরী সম্ভব। ভারতীয় নাগরিকদের রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি এবং জাতীয় পরিচয় পত্র সম্পর্কিত বিষয়ের সঙ্গে তা জড়িত। বিগত ১৫-১৬ বছর ধরে এই আইন রয়েছে। সিএএ আলাদা করে এতে কোনও পরিবর্তন আনেনি।