top of page

ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রাণপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দ

স্বামীজীর জীবনী :

ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রাণপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দ ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১২ই জানুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির কলকাতার সিমলার সুবিখ্যাত উচ্চবিত্ত হিন্দু কায়স্থ দত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।জন্মকালীন শৈশবে বিবেকানন্দ নরেন্দ্রনাথ দত্ত নামের অধিকারই ছিলেন। তবে পাড়ার সকলে আত্মীয় পরিজনের কাছে ‘বিলে’ বা ‘বীরেশ্বর’ নামেই অতি পরিচিত ছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের পিতা বিশ্বনাথ দত্ত কলকাতার উচ্চ আদালতের একজন আইনজীবী ছিলেন। জনপ্রিয় রত্নগর্ভা ভুবনেশ্বরী দেবী ছিলেন বিবেকানন্দের মাতা। পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণের স্নেহধন্য ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।




শিক্ষা জীবন :

শৈশব জীবন থেকেই অতি চতুর, সাহসী, কৌতূহল প্রিয়ই ছিলেন নরেন্দ্রনাথ। প্রথম জীবনে গৃহশিক্ষকের কাছে প্রারম্ভিক শিক্ষা অর্জনের পরে মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন থেকে নরেন্দ্রনাথ প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পাশ করে প্রেসিডেন্সী কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে এলেন স্কটিশ চার্চ কলেজ। এখান হতে এফ এ পাশ করে দর্শনশাস্ত্র নিয়ে বি এতে ভর্তি হন। এই কলেজ হতেই দর্শনশাস্ত্র নিয়ে তিনি স্নাতক হন৷ ছোটবেলা থেকেই ঈশ্বরেবিশ্বাসী নরেন্দ্রনাথ সংকীর্ণ জাতপাতের গন্ডির মধ্যে সীমায় আবদ্ধ থাকেননি। বরং ছাত্রাবস্থায় ব্রম্ভসমাজে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। এফ এ পড়বার সময় তিনি পরমপুরুষ রামকৃষ্ণদেবের সংস্পর্শে আসেন। তার কাছেই আধ্যাত্মিক জীবনচর্চার মন্ত্রে দীক্ষিত হন।

রামকৃষ্ণের সানিধ্য লাভ :

স্কটিশ চার্চ কলেজের Hestic সাহেবের কাছে Wordworth এর Excursion কবিতাটি পড়ার সময় তিনি দক্ষিণেশ্বরে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেবের ভাব সমাধির কথা শুনে শুনে তার সানিধ্য পরিচিত হতে চাইলেন। এই সংস্পর্শে আসার প্রথম দিন থেকেই তিনি ওনার প্রতি আশ্চর্য্য এক গভীর গভীর আকর্ষণ অনুভব করেন এবং শ্রী শ্রী ঠাকুর তাঁর ঐ আধ্যাত্মিক ক্ষমতা তরুণ নরেন্দ্রোনাথকে দান করার মাধ্যমে নতুন মন্ত্রে দীক্ষিত করেন। তার সানিধ্যেই নরেন্দ্রনাথ তথা বিরেশ্বর ‘জীবসেবার সেবার মধ্য দিয়েই ঈশ্বর সেবার’ দৃঢ় ভাবে বিশ্বাসী ছিলেন। এসময়ে নরেন্দ্রনাথ রামকৃষ্ণদেবের শিষ্য হয়ে সন্ন্যাস গ্রহণ করে ‘বিবেকানন্দ’ নামের অধিকারী হলেন। তিনি ছিলেন রামকৃষ্ণদেবের কাছে সাধারণ সন্ন্যাসীর মতন ছিলেন না,বরং তিনি ছিলেন বীরসন্ন্যাসী। ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে রামকৃষ্ণদেবের তিরোধান ঘটলে তিনি পরিব্রাজক হয়ে তিনবছর সারা ভারত পরিক্রমা করেন।

শিকাগো ধর্ম মহাসভা :

রামকৃষ্ণদেবের পরোমধন্য বিরসন্ন্যাসীর ভারত পরিক্রমার পরবর্তীতে রামকৃষ্ণদেবের ধ্যানধারণা চারিদিকে ছড়িয়ে দেবার জন্য বিদেশ ভ্রমনও করেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে শিকাগো রওনা হলেন ‘ধর্ম মহাসভার’। এই মহাসভার হিন্দুসম্প্রদায়ের সম্পর্কে বক্তব্য প্রেরণের মাধ্যমে ধর্ম সম্পর্কে বিশ্ব আলোড়ন সৃষ্টি করার ফলস্বরূপ অসাধারণ প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তৎকালীন ব্রিটিশ যুক্তরাষ্ট্রের ও আমেরিকার বহু নরনারীগণ তাঁর ধর্মমতে আকৃষ্ঠ হয়ে শিষ‍্যত্ব গ্রহণ করেন।

ভগিনী নিবেদিতার সানিধ্য লাভ :

সমগ্র বিশ্বের যত নরনারীগণ যখন বিবেকানন্দের শিষ্যত্ব লাভ করতে চাইলেন তার মধ্যে একজন ছিলেন মিস মার্গানেট নোবেল। ইনিই পরে ‘ভগিনী নিবেদিতা’ নামে পরিচিতি লাভ করেন। ইনিই বিবেকানন্দ পথের পথিক হয়ে সেবাধর্মে দীক্ষা নেন।

কর্মজীবন :

ঈশ্বরে বিশ্বাসী, সর্ব ধর্ম প্রতি শ্রদ্ধাশীল,আধ্যাত্মিক চেতনার অধিকারী পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণের স্নেহধন্য বিরসন্ন্যাসী বিবেকানন্দ সেবা ও ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষেই তিনি সারাটা জীবন অতিক্রান্ত করেন। সুদূর আমেরিকা থেকে ‘ধর্ম মহাসভার’ বিজয়ীর সম্মান নিয়ে ফেরার পরবর্তীতে রামকৃষ্ণ মঠ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবসেবা, বেদান্ত দর্শন ও সংকীর্ণ জাতপাত এবং দরিদ্র- আর্ত মানুষদের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করেন।

বিবেকানন্দের শিক্ষাদর্শন :

আধুনিক শিক্ষার প্রাণপুরুষ রূপে তিনি বলেন “Education is the manifestation of perfection already in man” অর্থাৎ তিনি বলেন মানুষের মধ্যে যে অন্তনিহিত সুপ্ত সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে তার পরিপূর্ণ বিকাশসাধনই হল শিক্ষা। তিনি বৃত্তি শিক্ষা, ধর্ম শিক্ষা, শারীরশিক্ষা, গণশিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষাদান পদ্ধতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন।

মিশন ও সম্মাননা :

১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে তারই সৃষ্টি ‘রামকৃষ্ণ মিশন’ এবং ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন ‘বেলুড় মঠ’। তাহার এই অমরসৃষ্টি কৃতি সারা বিশ্বে থেকে এনেছে বহু খ্যাতি। তার নামের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিবেকানন্দ মেরিটকাম স্কলারশিপ প্রদান করা হয় এবং তার মহত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ ভারতের দক্ষিণ প্রান্তে ‘স্বামী বিবেকানন্দ মেমোরিয়াল হল’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

জীবনাবসান :

১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে বিবেকানন্দ দ্বিতীয়বারের জন্য আমেরিকায় যান। সেখানে ১৯০০ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে অনুষ্ঠিত বিশ্বধর্ম সম্মেলনে যোগদান করেন। সেখান থেকে ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে দেখে ফেরার পরবর্তীতে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা জুলাই রাত্রি ৯টা ৫০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্তহয়ে পরলোকে গমন করেন।

bottom of page