মুর্শিদাবাদের সবথেকে জনপ্রিয় দ্রষ্টব্য হাজারদুয়ারি প্রাসাদ থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তরে আছে কাঠগোলা বাগানবাড়ি। বাগানে ঘেরা বিশাল স্থাপত্য আর জমকালো সব ভাস্কর্য মুগ্ধ করার মতোই।
শীতের মরশুমে হাজারদুয়ারীর পাশাপাশি পর্যটকদের ভিড় এখন চোখে পড়ার মতো কাঠগোলা বাগানে। ঘুরে আসুন এই কাঠগোলা বাগান। জানুন অজানা ইতিহাসের কাহিনী। মুর্শিদাবাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় দ্রষ্টব্য হাজারদুয়ারি প্রাসাদ থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তরে কাঠগোলা বাগানবাড়ি। বাগানে ঘেরা বিশাল স্থাপত্য আর জমকালো ভাস্কর্য মুগ্ধ করার মতোই।
জায়গার নাম কেন ‘কাঠগোলা’ হল, তা নিয়ে দু’টি মত প্রচলিত। বাগানে ঢোকার মুখে দেখা যায় একটা বড়ো নহবত গেট, তার সামনে পূর্ব-পশ্চিমে রাস্তা চলে গিয়েছে। লোকে বলেন, এই রাস্তার দু’পাশে ছিল কাঠের গোলা। সেখান থেকে এই নামটা এসেছে বলে মনে করেন অনেকে। এই বাগানবাড়ি ফুলের জন্যও বিখ্যাত। বাগানের নানা ফুলের মধ্যে গোলাপের নাম ছড়িয়ে পড়েছিল দিকে দিকে।
অনেকের বিশ্বাস, কাঠগোলাপের থেকেই বাগানবাড়ির নাম হয়েছে কাঠগোলা। জানা যায়, জগৎ শেঠের সহযোগিতায় তৎকালীন নবাবের কাছ থেকে ১২০০ টাকায় ৩২ বিঘার এই বাগানটি কিনে নেন মন্দির নির্মাণের জন্য। ধনবান ব্যবসায়ী এবং জমিদার লছমীপৎ সিং দুগার ১৮ শতকে কাঠগোলা বাগান বাড়ি নির্মাণ করান। এটি বর্তমানে দুগার পরিবারের বাগানবাড়ি।
লছমিপৎ, জগপৎ, মহীপৎ এবং ধনপৎ এই চারভাই এই বাগান বাড়িতে বসবাস করতেন। সিংহদ্বার দিয়ে বাগানে প্রবেশ করলেই বাগানের চার কোণে এই চার ভাইয়ের অশ্বারোহী মূর্তির দেখা মেলে। ১৯৩৩ সালে লছমীপৎ তার মায়ের সম্মানার্থে বাগানের ভেতরে জৈন মন্দিরটি নির্মাণ করেন। এক সময়ে এই বাগানবাড়িতে নিয়মিত জলসা হত। নবাব এবং অভিজাতদের যাওয়া আসা ছিল।
ইংরেজরাও এখানে আসতেন। মুর্শিদাবাদে ব্রিটিশদের ক্ষমতালাভের ষড়যন্ত্রেও এই বাগানবাড়ি জড়িয়ে ছিল। বাগানের ভিতর একটি সুড়ঙ্গপথ আছে, যা ভাগীরথীর সঙ্গে যুক্ত। ওই গোপন পথে জগৎ শেঠের বাড়ি যাওয়া যেত বলে শোনা যায়। এখানকার প্রাসাদ, সংগ্রহশালা, বাগান, আদিনাথ মন্দির, চিড়িয়াখানা, বাঁধানো পুকুর, গোপন সুড়ঙ্গ দেখতে ভিড় করেন প্রচুর পর্যটক।