top of page

কম আয় থেকে উচ্চ আয়ের দেশ, এবার ২০৩৪ সালে উচ্চ আয়ের সারণীতে ভারত

মাথাপিছু আয়ের হিসেবে ভারত এখন লোয়ার মিডল ইনকাম ক্যাটিগরির দেশ। আপনার-আমার আয় যাই হোক না কেন। ভারতবাসী হিসাবে আমরাও এই ক্যাটেগরিতেই পড়ি। আমাদের দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ এখনও লোয়ার ইনকাম সেগমেন্টে বিলং করেন। এবার আসল খবরে আসি। সুখবরও বলতে পারেন। সবকিছু ঠিকঠাক চললে আগামী ১০ থেকে ১২ বছরে উচ্চ-মধ্যবিত্ত দেশ হতে চলেছে ভারত। এর মানে কী? মানে এটাই যে একটা বড় সংখ্যায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণীতে ঢুকে পড়বেন। গত ৩ বছর ধরে দেশের আর্থিক গতিপ্রকৃতি নিয়ে গবেষণা চালিয়েছে উপদেষ্টা সংস্থা ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চ। তারাই বলছে এই কথা। কীভাবে ভারত আগামী ১০ বছরে ২ ধাপ ওপরে উঠবে তাও ব্যাখ্যা করা হয়েছে এই রিপোর্টে। তিনটে পয়েন্ট আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।


এক, গত কয়েকটি ত্রৈমাসিকে দেশের আর্থিক বৃদ্ধিতে গতি এসেছে। চলতি অর্থবর্ষেও বৃদ্ধির হার ৭ শতাংশ ছাপিয়ে যাবে। ৭ থেকে ৮ শতাংশ বৃদ্ধি ধরে রাখা গেলে ২০২৯ সাল নাগাদ মধ্যবিত্ত আয়ের ঘরে ঢুকে পড়বে ভারত। সেখান থেকে উচ্চ-মধ্যবিত্ত হওয়ার জার্নি শুরু। দুই, গত পাঁচ বছরে যেসব পরিকাঠামো প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। সেগুলো ২০২৭-২৮ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এমন আড়াইশো পরিকাঠামো প্রকল্প ঘিরেই অর্থনীতিতে যোগ হবে পাঁচ লক্ষ কোটি টাকা। তিন, মাথাপিছু আয়ের নিরিখে ভারত উন্নত দেশের তুলনায় পিছিয়ে থাকলেও একটা ইতিবাচক ছবি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২০২২-২৩ সালে দেশে মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা। ২০২১-২২ সালের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। ২০২৯ সালে সেটাই ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার আশপাশে পৌঁছবে। যা কিনা প্রথমে দেশকে ঠেলে তুলবে মধ্যবিত্ত ক্যাটিগরিতে। পরে উচ্চ-মধ্যবিত্ত দেশের তালিকায়। ইন্ডিয়া রেটিংসের রিপোর্টে উঠে এসেছে ভারতের আর্থিক ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি। এসবের মধ্যে একটাই ডার্ক স্পট রয়ে গেছে। তা হল চাকরির বাজার বা রোজগারে অনিশ্চয়তা। অর্থনীতি তেজি থাকলে চাকরির বাজারেও সুযোগ তৈরি হতে বাধ্য। সেক্ষেত্রে কাজের সঙ্কট হয়ত কিছুটা মিটবে। কিন্তু পুরোটা নয়। তাই অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে মানুষের রোজগারের সুযোগ বাড়াতে কেন্দ্রকে নীতি বদলের পথে যেতেই হবে। মুদ্রাস্ফীতির কথা না ভেবেই ঋণনীতি ঠিক করতে হবে। বেসরকারি লগ্নি টানতে হবে। সঙ্গে পরিকাঠামো-সহ সামাজিক ক্ষেত্রে সরকারকে নিজেকে টাকা ঢালতে হবে। তাতে আরেকটা সুবিধে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা এলেও আমাদের ভুগতে হবে না। সোজা কথায় ২০৩৪ সালেই উচ্চ-মধ্যবিত্ত দেশ হওয়ার জন্য একটাই কাজ। আর্থিক বৃদ্ধি ও কর্মকান্ডের গতি কিছুতেই কমতে দেওয়া যাবে না।

ব্রিটিশ দার্শনিক জন স্টুয়ার্ট মিল বলবেন সুখী শুয়োর হওয়ার চেয়ে একজন অসুখী মানুষ হওয়া ভাল। সুখী মূর্খ হওয়ার চেয়ে অসুখী সক্রেটিস হওয়া ভাল। আসলে সুখ শব্দটাকে আপনি যেভাবে দেখছেন তার ওপরই আপনার সুখী হওয়া বা অসুখী হওয়া নির্ভর করছে। এটা একটা ওপেন ডিবেট। খোলা বই। এতগুলো কথা কেন বললাম জানেন। বুধবার ছিল ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ডে। বিশ্ব সুখ দিবস। এইদিনেই ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ইনডেক্স বা বিশ্ব সুখ সূচক প্রকাশ করেছে গ্যালাপ। এটা একটা ১৯৩৫ সালে তৈরি হওয়া মার্কিন সংস্থা। যাদের রিসার্চকে দুনিয়া মান্যতা দেয়। গ্যালাপ ওয়ার্ল্ড পোলের রিপোর্ট বলছে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ আমেরিকা নয়। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চিন নয়। ফ্রান্স। ব্রিটেন। রাশিয়া। জার্মানির মতো শক্তিধর দেশ নয়। বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হল ফিনল্যান্ড। এই নিয়ে পর পর ৭ বার সুখ সূচকে তারা প্রথম হল। তারপর আছে ডেনমার্ক। আইসল্যান্ড। সুইডেন। ইজরায়েল। নেদারল্যান্ডস। নরওয়ের মতো দেশগুলো। আমার এক বন্ধু কিছুদিন ফিনল্যান্ডে ছিল। ওর মুখে শুনেছি ফিনল্যান্ডে এখন জেলগুলোকে মিউজিয়ম করে দেওয়া হচ্ছে। কারণ দেশে কয়েদি নেই। ওদেশে লাইব্রেরি থেকে বই নেওয়ার জন্য কোনও মেম্বারশিপ লাগে না। কারণ বই নিয়ে কেউ ফেরত দেবে না। এটা ফিনিশরা ভাবতেই পারে না। তালিকায় দেখুন ওপরের দেশগুলো প্রায় সবই স্ক্যান্ডিনেভিয়ান কান্ট্রি। যে দেশগুলোয় সরকারের টপ প্রায়োরিটি হল সাধারণ মানুষের সোশাল সিকিওরিটি। কেন ওখানে মানুষ সুখী। এ থেকে তার একটা আন্দাজ আমরা করতেই পারি। এই তালিকায় ভারত আছে ১২৬ নম্বরে। সবার শেষে ১৪৩ নম্বরে আফগানিস্তান। আমেরিকা। জার্মানি। প্রথম কুড়ি থেকে ছিটকে গেছে। ব্রিটেনের স্থান হয়েছে ঠিক কুড়ি নম্বরে। গ্যালাপের রিপোর্টে দেখলাম কোন দেশ কতটা সুখী। সেই বিচার করার জন্য তারা কয়েকটা মাপকাঠি ঠিক করে নেয়। তার মধ্যে রয়েছে আয়। আয়ু। সুস্থ জীবন। সমাজে সহযোগিতার মনোভাব। স্বাধীনতা। উদারতা। দুর্নীতি। এরকম সব পয়েন্ট। এখানে একটা খুব ইন্টারেস্টিং জিনিস পেলাম। ওরা বলছে যে উন্নত দেশগুলোয় সুখের অভাবের বড় কারণ হল তরুণ প্রজন্মের মন খারাপ। অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে। আর এ যন্ত্রণার অন্যতম বড় কারণ হল সোশাল মিডিয়া। সুতরাং বলতে পারি আমাদেরও কিন্তু এনিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আমি আমার পরিচিত কয়েকজন মনোবিদের সঙ্গে কথা বললাম। তারা আবার আরেকটা পয়েন্ট তুললেন। বললেন যে সারাবছর সুখে থাকে। কোনও একটা কারণে সাময়িক মন খারাপ। সেইসময় তাঁকে যদি আপনি জিজ্ঞাসা করেন সে বলবে আমি অসুখী। আর ঠিক একইভাবে সারাজীবন দুঃখে থাকা একটা মানুষ সাময়িক সুখের মুহূর্তে বলবেন আমি ভালোই আছি। ফলে সুখ নিয়ে সার্ভে করে সঠিক রেজাল্ট পাওয়া কিন্তু সহজ নয়।

bottom of page